top of page

ট্রপিক্যাল ভ্যাকসিন: ইঞ্জেকশনের পরিবর্তে লোশন?
Dr. Ahsan Rahman

আজ গায়ে সাবান লাগিয়েছেন? গোসলের পর লোশন লাগিয়েছেন? কেমন হবে যদি সেই লোশনে থাকে এমন এক এন্টিজেন যা গায়ে মাখলে শরীরের ত্বক সেখান থেকে এন্টিবডি তৈরির মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা দিবে? ক্ষতিকর জীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সাবান প্রয়োজন হলেও প্রতিদিন আমরা যেভাবে সাবান ব্যবহার করি তাতে উপকারের পাশাপাশি অপকারও হয়।
আমাদের ত্বক শুধু সৌন্দর্যের বাহক নয়, এটি রোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রও যাকে আমরা বলি ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স। আমরা জানি, ত্বকে অনেক ধরণের মাইক্রোবস বা জীবাণু বাস করে। কিন্তু এদের উপকারীতা নিয়ে অনেক গবেষনা হলেও এবারই প্রথম গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নতুন একটা বিষয় খুঁজে পেয়েছেন ।
বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্ণাল ন্যাচার এ সপ্তাহে এমেরিকার NIH এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক Gribonika et al. ও Bousbaine et al. জানাচ্ছে আমাদের স্কিন বা ত্বক তার উপরে থাকা ব্যকটেরিয়ার এন্টিজেনের সাহায্যে নিজেই অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই অ্যান্টিবডি ত্বকে থাকা অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি করার জন্য শরীরের অন্য কোনও ইমিউন সেন্টারের যেমন লিম্ফ নোডের সাহায্যের দরকার হয় না! এর অর্থ হচ্ছে আমাদের ত্বকে নিজস্ব এক "ইমিউন ক্লাসরুম" আছে, যেখানে এটি ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নিরাপদে ত্বকে থাকতে দেয় এবং ক্ষতিকারকগুলকে সরিয়ে দেয়।
ভাবছেন কিভাবে জানা গেল এটা ? এজন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে ত্বকে থাকা একটা ক্ষতিকর নয় এমন সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যাকে আমরা বলি কমেনসাল ব্যাকটেরিয়া (যা সবার ত্বকে থাকে) Staphylococcus epidermidis নিয়ে ইঁদুরের ত্বকে লাগিয়ে দিয়েছেন । এরপর দেখা গেল — ২১ দিনের মাথায় ইঁদুরের ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জার্মিনাল সেন্টার বা "ইমিউন হাব" তৈরি হয়েছে । এই সেন্টারগুলোর কাজ হচ্ছে ইমিউন সেলগুলো যেমন টি সেল , বি সেল, বিসিএল ৬ ইত্যাদি কোষগুলোকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শেখানো । এরপরে যা দেখা গেল তা আরও আশ্চর্যজনক- এই কোষগুলো ইঁদুরের সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে ।
তা না হয় গেল কিন্তু এতে লাভ কি ? এটা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা এবার সেই একই গোত্রের ব্যকটেরিয়া কিন্তু ইনফ্লেমশন বা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এমন একটা ব্যক্টেরিয়া Staphylococcus aureus ইঞ্জেক্ট করে দিলেন । দেখা গেল প্রায় ৪৫ দিন পর্যন্ত যেসব ইঁদুরের গায়ে সেই নিরীহ ব্যাকটেরিয়া মেখে দেয়া হয়েছিল তারা সুরক্ষিত ছিল। কোন ইনফেকশন দেখা দেয়নি।
এরপরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ । যেমন টা নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, বিজ্ঞানীরা এবার এই Staphylococcus ব্যক্টেরিয়াতে ভয়ংকর টিটেনাস ব্যক্টেরিয়ার টক্সিন জুড়ে দিলেন । এবং এজ এক্সপেক্টেড, এই টিটেনাসের বিরুদ্ধেও সেই ইঁদুরের দেহে উচ্চ মাত্রার এন্টিবডি তৈরি হয়েছে । একদম ভ্যাকসিন দেয়া হলে যেই মাত্রার এন্টিবডি তৈরি হয় । দারুণ না !
এ তো গেল ইঁদুরের কথা। এরপর বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরেও S. epidermidis এর বিপরীতে সেই একই রকম এন্টিবডির প্রমাণ পেয়েছেন । এছাড়াও তিনটি আমাদের জন্য ক্ষতিকারক এমন ব্যক্টেরিয়ার বিরদ্ধে এন্টিবডিরও প্রমাণ পেয়েছেন , যদিও লো টাইটার।
এই আবিষ্কার শুধু একদিন ত্বকের উপর ট্রপিক্যাল টিকা বা ভ্যাকসিনই নয়, আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। একদিন হয়ত আমাদের আর ইঞ্জেকশন নিতে হবে না,শরীরে লোশন লাগালেই হবে। অনেকটা এখন যেমন ন্যাজাল স্প্রে দিয়ে ফ্লু এর ভ্যাকসিন দেয়া হয় ....

For more details:
https://www.nature.com/articles/s41586-024-08376-y
https://www.nature.com/articles/s41586-024-08489-4

#scicomahsanrahman

bottom of page