top of page

সাউথ এশিয়ায় হার্ট ডিজিস বেশী কেন?
Hasan Al Banna

সাউথ এশিয়ায় আমরা বিশ্বের প্রায় ২৫% মানুষ বাস করি, অথচ হার্ট ডিজিসের ৬০% কেস পাওয়া যায় এই অঞ্চলে। কিন্তু কেন?

১৯৪১ সালেও ডাটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, তখন আমেরিকার তুলনায় আমাদের এই অঞ্চলে ৬ গুনেরও কম মানুষ মারা যেত শুধুমাত্র হার্ট ডিজিসের কারণে। সেই এপিডেমিওলজি বদলে যায় ষাটের দশকেই। পূর্বে রিসার্চার বা ক্লিনিসিয়ানরা মনে করতেন ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইযেশনের কারণে মানুষ কৃষিকাজ কমিয়ে দিয়েছে, শারীরিক পরিশ্রম কম হচ্ছে – এইটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু সেই ঘটনা তো বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যেও সত্য। এছাড়াও ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ইউনিক কী এমন ব্যাপার আছে যে কারণে আমরা বেশী হার্ট ডিজিসের ঝুঁকিতে আছি?

১৫ বছর আগে করা একটি গবেষণায় দেখা যায় সাউথ এশিয়ার প্রায় ৪% মানুষের দেহে একটা জিন-এ মিউটেশন আছে (Ref: Nature Genet. 41, 187–191; 2009)। ওই জিনটা হার্টের কিছু প্রোটিন তৈরী করে থাকে। অবাক করা বিষয় হল ঐ মিউটেশনটা পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলের মানুষের মাঝে দেখা যায়নি। এখানেই আসে জেনেটিক প্রিডিস্পজিশনের ব্যাপারটা। একটা ব্যাখ্যা দিতে পারে Trifty Gene Hypothesis যেটি দিয়েছিলেন James Neel প্রায় ৬০ বছর পূর্বে (Ref: Am J Hum Genet 14: 352–353; 1962)। এই হাইপথিসিস অনুযায়ী famine বা দুর্ভিক্ষের সময় যাদের দেহ বেশি ফ্যাট স্টোর করার সক্ষমতা অর্জন করে তাদের দুর্ভিক্ষে বেচে থাকার সম্ভাবনা বেশি ছিল। সুতরাং ব্রিটিশ রাজের সময় আমাদের পূর্বপুরুষ যারা বেঁচে ছিলেন তারা কিছু ‘thrifty genes’ এক্সপ্রেস করার সক্ষমতা অর্জন করেন। তাদের বংশধর হিসেবে সেই জিন আমাদের মাঝে রয়ে গেছে, যে কারণে ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেহের ফ্যাট স্টোর করার এবিলিটি বেশি। ফলে সাউথ এশিয়ার মানুষের মাঝে টাইপ-২ ডাইবেটিস ও হার্ট ডিজিসের সম্ভাবনাও বেশি। এই হাইপথেসিসের সাইন্টিফিক প্রমাণ হিসেবে চীনের ২০২০ এ করা একটি গবেষণার কথা বলতে পারি (Ref: J Am Heart Assoc. 9(7): e014175; 2020)। রিসার্চাররা প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের ডাটা দিয়ে প্রমাণ করেন যে ছোট বেলায় যারা দুর্ভিক্ষের শিকার হন তাদের মাঝে শেষ বয়সে বিভিন্ন কারডিওভাস্কুলার ডিজিস হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। ব্রিটিশদের দুশ বছরে সাউথ এশিয়ার মানুষ প্রায় ৩১ টি দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়ে যায়, যেখানে বিশেষ করে বাংলাদেশীরা দুটি এক্সট্রা ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ পার করে ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালে। তাহলে ভাবুন তো সেটা কি পরিমাণ এফেক্ট ফেলতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের ওপর!

যাহোক, ২০০৮ সালে Speakman থ্রিফটি জিন থিওরির অল্টারনেটিভ একটি আইডিয়া প্রপোজ করেন যাকে বলে ‘Drifty Gene’ হাইপথিসিস (Ref: Int J Obes 32, 1611–1617; 2008)। যদিও স্পিকম্যান মূলত ওবেসিটি ফোকাস করে কথা বলছেন, তবে তার ক্যালকুলেশন অনুযায়ী থ্রিফটি জিন পরবর্তী জেনেরেশনে পাস হতে অনেক বেশী সময় লাগার কথা এবং শুধু কিছু নির্দিষ্ট জিন পজিটিভলি সিলেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং দুর্ভিক্ষের মত stress situation এ বিভিন্ন জিনে র‍্যান্ডম মিউটেশন ঘটে, এবং mutant allele গুলো ধীরে ধীরে পরবর্তী বংশধরে যায়। সন্তানের মাঝে সেই mutated gene থাকবে কি থাকবে না সেটা সম্পূর্ণ ভাগ্যের ব্যাপার, কোন ডমিন্যান্ট ইফেক্ট দারা নির্ধারিত হয়না।

গত সপ্তাহের nature জার্নালের ইস্যুতে Onil Oza বেশ কয়েকজন সাইন্টিস্ট ও ক্লিনিসিয়ানদের সাথে কথা বলে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন (Ref: Nature 633, 272-274; 2024)। সামারি হচ্ছে জেনেটিক ফ্যাক্টর ছাড়াও মানুষের ডায়েট, সামাজিক অবস্থা, এক্টিভিটি, পরিবেশ ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে সাউথ এশিয়ানদের হার্ট ডিজিস বেশী হওয়ার পেছনে। কিন্তু এইসব সোশ্যাল ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য ফান্ডিং পাওয়া কঠিনতর বলে জানান Northwestern University এর একজন সাইন্টিস্ট। যাহোক, গত দশক ধরে সাইন্টিস্টরা ‘পলিজেনিক রিস্ক স্কোর’ নামের একটি স্কোরিং সিস্টেম ব্যাবহার করে চেষ্টা করছেন হার্ট ডিজিস প্রেডিক্ট করার একটি ভালো এলগরিদম ডেভেলপ করতে (Ref: Nature 562, 181–183; 2018)। তার জন্য দরকার অনেক মানুষের জেনোমের ডাটা, বিশেষ করে সাউথ এশিয়ান মানুষের জেনোম ডাটা, সাথে অন্যান্য সব সোশ্যাল ফ্যাক্টর এর তথ্য। তাহলেই হয়ত একদিন মডেলটা আমাদের অঞ্চলের মানুষের হার্ট ডিজিসের সম্ভাবনা ভালো প্রেডিক্ট করতে পারবে।
#publichealth #hearthealth #SouthAsia

bottom of page